বর্মি সেনা আর নাডালা বাহিনীর সদস্যরা কোনো রোহিঙ্গা পাড়ায় যখন ঢোকে তখন সেখানে তাণ্ডব শুরু হয়ে যায়। তাদের মূল লক্ষ্য রোহিঙ্গা যুবকেরা। যুবকদের তারা হত্যা করে, বয়স্ক ও শিশুদের বসিয়ে রাখে, আর যুবতীদের ধরে নিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গারা এসব তথ্য জানিয়েছেন। এই তরুণীদের দুর্গম এলাকার সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন তারা।
মংডুর জীবনখালীর আনিসুল মুস্তাফার ছেলে শহর মূলক (২৫)। বর্মি সেনাবাহিনীর হাত থেকে পালিয়ে আশ্রয়ের জন্য এসেছেন টেকনাফের লম্বাবিল এলাকায়। লম্বাবিল প্রধান সড়ক হয়ে পায়ে হাঁটা রাস্তায় প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে নাফ নদীর সীমান্তে গত ১৫ সেপ্টেম্বর কথা হয় এই শহর মূলকের সাথে। তিনি বলেন, বর্মি বাহিনীর অত্যাচার তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। যখন বর্মি সেনা ও নাডালা বাহিনীর সদস্যরা কোনো এলাকায় প্রবেশ করে তখন ওই এলাকায় তাণ্ডব শুরু হয়ে যায়। পাড়ার সবাই তখন দৌড়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টায় থাকেন। পালিয়ে যাওয়ার সময় অনেকেই হতাহত হন। যাদের ধরতে পারে তাদের মধ্যে যুবকদের সাথে সাথে গুলি করে এবং গলা কেটে হত্যা করে বর্মি বাহিনী ও নাডালা বাহিনীর সদস্যরা।
অবিবাহিতা যুবতীদের ধরে গাড়িতে করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। আর বয়স্ক ও শিশুদের বসিয়ে রাখে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা চলে গেলে বয়স্ক ও শিশুরা তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে আশপাশের ঝোপজঙ্গলে চলে যায়। এরপর সেখান থেকে চলে আসে বাংলাদেশ সীমানায়। মংডুর বলি বাজার এলাকার আবদুল খালেকের ছেলে নবী হোসেন বলেন, যুবকদের মধ্যে কেউ রক্ষা পায়নি। তাদের খুঁজে খুঁঁজে হত্যা করেছে। এর মধ্যে ১৩ বছর থেকে ৩৫ বছরের যারা ছিল তাদের বেশির ভাগই বর্মি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। নবী হোসেন বলেন, যুবতীদের যে শুধু ধর্ষণ করেছে তাই নয়, তাদের দুর্গম এলাকার সেনা ক্যাম্পে সাপ্লাই দেয়া হয়।
সেখানে বর্মি সেনাদের মনোরঞ্জনের জন্য তাদের ব্যবহার করা হয় বলে নবী হোসেন বলেন। তবে এর চেয়েও ভয়াবহ তথ্য দিয়েছেন ওই একই এলাকার নুর হাসিম। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা যুবতীদের যে শুধু ধর্ষণ আর সেনাদের মনোরঞ্জনের জন্য নেয়া হয়েছে তাই নয়। অনেক সুন্দরী যুবতীকে ধরে নেয়া হয়েছে মগদের সন্তান উৎপাদনের জন্য। নুর হাসিম বলেন, মগদের সন্তান কম হয়ে থাকে। সাধারণত তিনটির উপরে কোনো মগ নারী সন্তান ধারণ করতে পারে না। সেখানে একজন রোহিঙ্গা নারী অনেকগুলো সন্তান ধারণে সক্ষম। নুর হাসিম বলেন, ওই সব সুন্দরী যুবতীদের ধরে নিয়ে যায় মগদের সন্তান ধারণের জন্য। সরকারিভাবে সেখানে ওই সব সন্তানকে বৌদ্ধ হিসেবে লালন পালন করা হয়।
মংডুর হাইছ সুরতা এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে সেলিম উল্লাহ (৫০)। তিনি বলেন, তার পাড়ার কোনো যুবক ছেলের জীবন বাঁচেনি। তার পরিবারে ১১ জন সদস্যের মধ্যে নারী-শিশুসহ ৯ জনকে নিয়ে তিনি পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। উপার্জনক্ষম দুই সন্তান রেদওয়ান (২০) ও আনসার উল্লাহকে (১৮) বর্মি বাহিনী গুলি করে হত্যা করে। সেলিম উল্লাহ বলেন, সেনাবাহিনী ও নাডালা বাহিনীর সদস্যরা গুলি করতে করতে তাদের পাড়ায় প্রবেশ করে। এ সময় তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে নারী-শিশু ও বয়স্কদের একটি স্থানে বসিয়ে রাখে। তাদের মধ্যে যেসব তরুণীকে পছন্দ হয় তাদের ধরে নিয়ে গাড়িতে উঠায়।
আর তার দুই ছেলে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের ধরে প্রথমে গুলি করে এবং পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলা কাটে। ওই পাড়ারই শিল কুয়ায় (খাবার পানির কূপ) তাদের লাশ ফেলে দেয়া হয়। সেলিম উল্লাহ বলেন, ওই কুয়ায় তাদেরই চোখের সামনে আরো অন্তত ৩০ জনের লাশ ফেলতে দেখেছেন।
No comments:
Post a Comment