শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদে
আপনারা ঘুষ খান, কিন্তু সহনীয় মাত্রায় খান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের এ বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় চলছে দেশজুড়ে। তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি চলছে নানা ধরনের ব্যঙ্গ বিদ্রুপ। মন্ত্রীর এ বক্তব্যে ঘুষ দুর্নীতি আরো ছড়িয়ে পড়বে বলে উদ্বেগ আর হতাশা প্রকাশা করেছেন অনেকে। কেউ কেউ মন্ত্রীর বক্তব্যকে জাতির জন্য ভয়ঙ্কর বার্তা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। জাতির মেরুদণ্ড নির্মাণের দায়িত্ব নিয়োজিত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্যকে গভীর দুঃখজনক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রবীণ অনেক শিক্ষাবিদ।
ঘুষ খাওয়া নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশের পরপরই ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিতে থাকেন অনেকে। তাতে তারা ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করার পাশাপাশি ব্যঙ্গ বিদ্রুপসহকারে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন গতকাল দিনব্যাপী। অফিস, চায়ের আডডায়ও চলে এ নিয়ে তির্যক আলোচনা। তাদের মতে মন্ত্রীর এ বক্তব্যে ঘুষখোররা যেমন উৎসাহিত হবে- তেমনি বাড়বে এর মাত্রা। শিক্ষামন্ত্রী ঘুষকে বৈধতা দিলেন মন্তব্য করে অনেকে ফেসবুকে লিখেছেন ঘুষের সহনীয় মাত্রা কতটুকু তা বললে ভালো হতো। অনেকে লিখেছেন এখন আর দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের প্রয়োজন নেই। মন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর দুদক বিলুপ্ত করা উচিত। আরেকজন প্রশ্ন করেছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন আগের চেয়ে অনেক বাড়ানো হয়েছে। তার পরও সরকারের উচ্চপর্যায়ের একজন মন্ত্রীর পক্ষ থেকে এভাবে সরকারি লোকজনকে ঘুষ খাওয়াকে বৈধতা দান এবং উৎসাহ দেয়া হয় তাহলে আমরা আর কষ্ট করে ট্যাক্স দেবো কেন। আমাদের ট্যাক্সের টাকায় তাদের উচ্চ বেতন দেয়ার পরও যদি তাদের ঘুষ খাওয়া অব্যাহত থাকে তাহলে তাদের বেতন বাড়ানো হলো কেন। এমনকি বেতন বাড়ানোর পর ঘুষ কি পরিমাণ কমেছে সে প্রশ্নও উঠেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এমিরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর এ বক্তব্য অপ্রত্যাশিত, দুঃখজনক। এতে দুর্নীতিবাজরা আরো উৎসাহিত হবে। মন্ত্রীর দায়িত্ব অনিয়ম প্রতিকার করা। কিন্তু তিনি তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে দুর্নীতি মেনে নিলেন। এমনিতেই শিক্ষা খাতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা অভিযোগ রয়েছে, তারপর মন্ত্রীর কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য আসা উচিত নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এমিরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর এ বক্তব্য অপ্রত্যাশিত, দুঃখজনক। এতে দুর্নীতিবাজরা আরো উৎসাহিত হবে। মন্ত্রীর দায়িত্ব অনিয়ম প্রতিকার করা। কিন্তু তিনি তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে দুর্নীতি মেনে নিলেন। এমনিতেই শিক্ষা খাতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা অভিযোগ রয়েছে, তারপর মন্ত্রীর কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য আসা উচিত নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর এ বক্তব্য কোনো অবস্থাতেই সমর্থন করা যায় না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রী তার বক্তব্যের মাধ্যমে জাতির কাছে এক ভয়ঙ্কর বার্তা পাঠিয়েছেন। জাতির মেরুদণ্ড গঠনের দায়িত্বে বসে তিনি এ ধরনের কথা বলতে পারে না।
কয়েক বছর ধরে ক্রমাগতভাবে প্রশ্নফাঁসসহ নানা কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত দেশের শিক্ষা খাত। শিক্ষার মানের ধস বারবার জাতীয় আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সমাপনী পরীক্ষা, জেএসসি পরীক্ষা থেকে শুরু করে প্রায় সব পাবলিক পরীক্ষায় ছড়িয়ে পড়েছে অরাজকতা। প্রশ্নফাঁস এতই মহামারী আকার ধারণ করেছে যে, প্রাথমিক ও দ্বিতীয় শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষায়ও প্রশ্নফাঁসের কারণে শত শত স্কুলে পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়া এবং ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সাথে পরীক্ষার প্রশ্নের হুবহু মিল থাকার পরও শুরুতে প্রশ্নফাঁস অস্বীকার করেছেন সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তি।
পরে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা স্বীকার করার পর সর্বশেষ শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ শিক্ষকদেরই আসল প্রশ্নফাঁসকারী হিসেবে বক্তব্য দেন। এ নিয়ে শিক্ষকদের পক্ষে শুরু হয় উত্তপ্ত সমালোচনা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় বারবার জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের গণহারে অকৃতকার্য হওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনায় সমালোচনা চলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার মান নিয়ে। পাঠ্যবই পরিবর্তন নিয়েও কয়েক বছর ধরে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে বিভিন্ন মহলে। সমাপনী পরীক্ষা, জেএসসি পরীক্ষা ঘিরে শিক্ষার্থী, অভিভাবকেরা বন্দী হয়ে পড়েছেন কোচিং প্রাইভেট ব্যবস্থার কাছে। কোচিং প্রাইভেট নির্ভরতা কমার আশা নিয়ে চালু করা হয়েছিল সৃজনশীল ব্যবস্থা। কিন্তু আজ অবধি বেশির ভাগ শিক্ষকই এটি রপ্ত করতে পারেননি। ঘন ঘন পাবলিক পরীক্ষা, সৃজনশীল, প্রশ্নফাঁসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকসহ সব মহলে দীর্ঘ দিন ধরে বিরাজ করছে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা। এসব কারণে বারবার সমালোচিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
গত রোববার শিক্ষাভবনে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) সম্মেলন কক্ষে অধিদফতেরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ল্যাপটপ ও প্রশিক্ষণ সনদ বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা ঘুষ খান, কিন্তু সহনীয় হয়ে খান। কেননা, আমার এটা বলার সাহসই নেই যে, ঘুষ খাবেন না। তা অর্থহীন হবে।’
প্রায় সবখানেই ঘুষ লেনদেন হচ্ছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘খালি যে অফিসাররা চোর, তা না। মন্ত্রীরাও চোর। আমিও চোর। এ জগতে এমনই চলে আসছে। তবে এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।’
প্রায় সবখানেই ঘুষ লেনদেন হচ্ছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘খালি যে অফিসাররা চোর, তা না। মন্ত্রীরাও চোর। আমিও চোর। এ জগতে এমনই চলে আসছে। তবে এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।’
No comments:
Post a Comment